বিসিএস'র জন্য গবেষণামূলক রম্যরচনা...
বিসিএস রসিক 😀 🙄 ( ১ম পর্ব)
সৌজন্যঃসালিম আল-দ্বীন
S.T Coleridge! একদম S.T Coleridge এর মত চেহারা। নাক, মুখ, ঠোঁট, বাবড়ী চুল, গলায় রুমাল পেঁচানো। রসিক এতক্ষণ ধরে আয়নায় নিজের চেহারা দেখছে আর চমকে উঠার মত উঠছে। এটা কেমন কথা! তার চেহারা ইংরেজি সাহিত্যের কবি S. T Coleridge এর মত হলো কিভাবে! সে রাত্রে ঘুমিয়ে ছিলো নিজের চেহারা নিয়ে। আর এখন সেখানে এস টি কোলরিজের চেহারা! রসিক চিন্তিত হল। সে এবার হাত দিয়ে নিজের মুখ চোখ ও চুল ঘাটাঘাটি করে দেখছে। তার চিন্তা আরও বেড়ে গেল কারন সত্যিই সে পুরোদমে এখন কুলারিজ। তার মাথা ঘুরাচ্ছে। হ্যালুসিনেশনের ঘোরে সবকিছু ঘটছে নাতো!
ইংরেজি সাহিত্যের অতিপ্রাকৃতের( poet of supernaturalism) কবি কুলেরিজ। রোমান্টিক যুগের অন্যতম কবি। আফিম খেয়ে ঘুমস্বপ্নে পরাবাস্তবের শক্তি দিয়ে কবিতা লেখা যার অভ্যাস। অদ্ভুত ব্যাপার! কোন ভাবনা নেই, চিন্তা নেই-- শুধু আফিম খেয়ে নাক ডেকে ঘুমানো আর কবিতা লেখা! এটা কেমন কথা!
রসিকের জীবনের বড় ধরনের স্বপ্ন সে কুলেরিজের মত অতিপ্রাকৃতের শক্তি অর্জন করবে! কিন্তু স্বপ্নটা কবিতা লেখার জন্য নয় বিসিএস পড়ার জন্য। ঠিক কুলারিজের মত। প্রতিদিন আফিম খেয়ে ঘুমিয়ে যাবে। বিসিএসের স্বপ্নে বিভোর হবে। স্বপ্নের ভেতরেই বিসিএস পড়া শেষ হবে। তারপর একদিন বিসিএস ক্যাডার। তাও যেমন তেমন ক্যাডার নয় পররাষ্ট্র ক্যাডার!
রসিকের স্বপ্নটা জন্মেছিলো ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক সুধাংশু স্যারের কাছ থেকে। প্রতিদিন সে পড়ার টেবিলে বসে। বইপত্র ঘাটাঘাটি করে। বিসিএসের বৃহৎ সিলেবাস নিয়ে ব্যাপক চিন্তাভাবনা। বিশাল প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। বিসিএস ক্যাডার এবার হতেই হবে। অবশেষে বিশাল চিন্তাভাবনার ভিড়ে তার মাথা ধরে। বিসিএসের মাথামুন্ডু কিছুই মাথায় ঢোকেনা। ডেস্ক থেকে উঠে কিছুক্ষন সে হাঁটাহাঁটি করে। মুভি দেখে রিলাক্সের নেয়। এত চিন্তাভাবনার কি আছে। এখনো সময় আছে। প্রস্তুতি নেয়া যাবে।
এভাবে একবছরের বেশী সময় কেটে গেলো। বিসিএস পরীক্ষায় সে টিকলোনা। রসিক নাচার হয়ে পড়লো। উফ! বিসিএস ক্যাডার কিভাবে হওয়া যায়! অবশেষে সুধাংশু স্যার একদিন হাস্যকরভাবে কুলারিজ বিষয়ক ধারনাটা দিয়ে বললো," রসিক, আফিম খাও, ঘুমাও, বিসিএসের স্বপ্ন দেখ আর ক্যাডার হও।"😁
যেই ভাবা সেই কাজ। সুধাংশু স্যারের পরামর্শটা খারাপনা। কুলারিজ পারলে রসিক পারবেনা কেন?
প্রায় একমাস যাবৎ রসিক কুলারিজের থিওরি প্রাকটিস করছে। আজ বোধহয় থিওরিটা সত্যি হতে চলেছে। কথায় বলে অধ্যবসায় সৌভাগ্যের প্রসূতি। কিন্তু যে রসিক ঠোঁটে সিগারেট তুলতে পারেনা, সে কিভাবে আফিম হাতে নিয়েছে!
রসিক এতক্ষণে কনকনে শীতের মধ্যে গায়ে চাঁদর জড়িয়ে জবুথবু ছিলো। এখন গায়ে ঘাম দিচ্ছে। শরীর থেকে থেকে চাঁদর সরিয়ে ফেলেছে। তার চেহারা কুলারিজের মতই মনে হচ্ছে। এটা উড়িয়ে দেবার মত নয়! সত্যিই কি কুলারিজ বিষয়ক থিওরিটা তবে কাজ শুরু করেছে! সুধাংশু স্যারের কথা অনুযায়ী এমন হতেই পারে। তাহলে কোলরিজের মত তার ক্ষেত্রেও অতিপ্রাকৃতের ঘটনা ঘটছে নিশ্চিত! রসিকের বিশ্বাস করতে এখন আর কষ্ট হচ্ছেনা।
রসিক দাঁড়াল। চারিদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখছে। বিস্ময়ের ব্যাপার! এতো চীনের জানাডুর প্রাসাদ! মঙ্গোল শাসক কুবলাই খানের প্রাসাদ! চারিদিকে প্রাচীর, বিচিত্র ফুলের সম্ভার। ঝর্ণাধারা অন্ধকার সাগরের গর্জনের সাথে মিশে যাচ্ছে। এখানে দাঁড়িয়ে সম্ভবত কুবলাই খান সম্ভবত পূর্বপুরুষদের কন্ঠস্বর শুনতেন , যুদ্ধের ভবিষ্যৎবানী করতেন। উঁচু পাহাড়টি নদীতীরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। পাহাড়টির ছায়া প্রাসাদের গায়ে গম্ভীরতার ছাপ ফেলছে। নদীর কুলুকুলু ধ্বনী, সাগরের গর্জন এক হয়ে মিশে সুন্দর সুর সৃষ্টি করছে। বৈকালিক সমীরণে ফুলের চমৎকার সুগন্ধ! দশ মাইল দীর্ঘ জানাডুর প্রাসাদের এ রূপচ্ছটাই কুলরিজ আফিম ঘোরে স্বপ্নে পেয়েছিলেন। যার ফসল তার বিখ্যাত Kubli khan কবিতা!
কোলরিজের মত তার মধ্যেও এখন অতিপ্রাকৃতের ঘটনা ঘটছে। ব্যাপারটা খারাপনা। বিসিএসের প্রিপারেশনে এর জুড়ি মেলা ভার!
কারন অতিপ্রাকৃতের শক্তিতে গ্রহ নক্ষত্রের নাড়িনক্ষত্র বের করাটা তুড়ির ব্যাপার। ভূগোলে তার যথেষ্ট দূর্বলতা ছিলো -- এবার ভূগোলকে সুগোল করে ফুটবল বানিয়ে লাথি মারতে তার আর বাঁধা নেই। রবীন্দ্র, নজরুল থেকে আলবার্ট আইস্টাইনের সাথে মুখোমুখি সাক্ষাতের কথা ভাবতেই সে আনন্দে ঝলমলিয়ে উঠল। হিটলারকে ২য় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তার অনেককিছু বলার আছে। সুযোগমত অবশ্যই বলবে। জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক সংগঠন এমন স্বেচ্ছাচারী হবে কেন? এর একটা বিহিত করা দরকার। শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানকে সামনাসামনি করার সুযোগ হাতছাড়া করা উচিৎ না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ দুজনকে নিয়ে এখন বড় সংকট!😶😶
মেরী ইভান্স একটি শিশু মেয়েকে সাথে নিয়ে জানাডু প্রাসাদের ঝাউবনের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে আসছে। অপ্রত্যাশিত ব্যাপার। মেরী ইভান্স জানাডুর প্রাসাদ চিনলো কিভাবে! এই মেরী ইভান্সকেই কুলরিজ মনেপ্রাণে ভালবাসত। কিন্তু ইভান্স প্রত্যাখ্যান করেছিলো। তারপর কুলরিজের পাগলপ্রায় দশা! আজ ইভান্সের ফিরে আসার অর্থ হলো সম্ভবত সে কুলরিজে আকৃষ্ট হয়েছে! যদিও কুলরিজের সারা নামে স্ত্রী আছে।
ইভান্স এসেই কুলরিজরূপী রসিকের চোয়ালে চুমু দিল। লিপস্টিকের রং কুলরিজের চোয়ালে অঙ্কিত হল। একে বলা যায় লুকায়িত ভালোবাসার অপ্রতিরোধ্য ফল। কুলরিজ হন্তদন্ত হয়ে পড়লো।
ততক্ষণে কুলরিজের সহযোগী বন্ধু উইলিয়াম ওয়ার্ডওয়ার্থ কুলরিজের পাশে। সে ইংরেজি সাহিত্যের বিখ্যাত কবি ও কুলরিজের সহযোগী। এরাই রোমান্টিক যুগের যুগের সূচনা করেছিলো "Lyrical Ballads" নামক জনপ্রিয় রোমান্টিক কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে। কোলরিজের মনে পড়ে গেল তার সমসাময়িক আরো কয়েকজন বিখ্যাত রোমান্টিক কবিদের কথা-- পি বি শেলী, জন কিটস, লর্ড বাইরণ,জেইন অস্টিন,আলেকজান্ডার পাসকিন, উইলিয়াম ব্লেক, উইলিয়াম হাজলিট, চার্লস ল্যাম্ব প্রমুখ। ওয়ার্ডসওয়ার্থকে দেখে রসিকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে পড়েছে। ইংরেজি সাহিত্যে রোমান্টিক যুগের পিরিয়ড ছিলো ১৭৯৮-১৮৩২। যা বারবার পড়েও মনে থাকেনি। আজ যেন বিসিএস মাথায় গিজগিজ করছে। মিরাকল ব্যাপার! রসিকের কপালে ব্যথা করছে এবং মাথাটা থেকে থেকে ঘুরাচ্ছে। সে বুঝতে পরছে, চেহারার সাথে সাথে তার চিন্তাভাবনাও কোলরিজের মত হতে চলেছে।মাথা ঝিমঝিম করা তার প্রমান।
সুযোগ হাতছাড়া করা বোকামী। রসিক এখন গিজগিজপূর্ণ বিসিএস মাথা থেকে কোলরিজের সমসাময়িক কিছু ঘটনা বের করার চেষ্টা করলো।
চেষ্টার শুরু করতেই দার্শনিক কান্ট তার সামনে উপস্থিত! এই সেই দার্শনিক কান্ট যে বলেছিলো, এই পৃথিবীতে এইমাত্র যে সদ্যোজাত শিশুটি ভূমিষ্ঠ হলো সেই সবচেয়ে বড় দার্শনিক। বিখ্যাত উক্তি। কোলরিজ দার্শনিক কান্টের ভক্ত। তারা এখন ভূমধ্য সাগরের সৈকতে। ভূমধ্যসাগর হলো সর্বাধিক দেশে পরিবেষ্টিত সাগর। এ সাগর থেকে এশিয়ায় আসার জন্য সুয়েজ খাল খনন করা হয়। সুয়েজ খাল লোহিত সাগরের সাথে মিশে বাব-আল-মান্দেব প্রনালী হয়ে আরব সাগরে পড়েছে। ওদিকে জিব্রালাটার প্রনালী স্পেন মরক্কোকে পৃথক করে ভূমধ্যসাগরকে আটলান্টিকের সাথে যুক্ত করেছে।
কান্ট কিছুক্ষন সৈকতে হাঁটাহাঁটির পরে তাকে বললো, "১৭৮৯ সংঘটিত সালের ফরাসী বিপ্লবের সময় আমার দেয়া উপদেশের কথা মনে আছে? তোমার অতিপ্রাকৃত লেখনিতে সবগুলো লিখো। শুধু আমার কথা নয় দার্শনিক ভলতেয়ার, রুশো ও কার্লমার্কের কথাও লিখো।" কিছুটা হেসে আবারো বলতে শুরু করলো, " তোমরাও এখন দুঃসময় কাটিয়েছো বলতে হবে। ১৮০৫ সালের ট্রাফালগার যুদ্ধে জয় করলে। সবচেয়ে বড় কথা ১৮১৫ সালে ওয়াটার লু'র যুদ্ধে জয় করাটা একটা মাইলফলক। যুদ্ধে নেপোলিয়ান পরাজিত হয়ে এখন সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসিত! বড়মাপের শত্রুর বিদায়, কি বলো? ওয়াটার যুদ্ধে ওয়েলিংটন বীরত্ব দেখানোর জন্য আমি ধন্যবাদ দিয়েছিলাম। সে খুশি হয়েছিলো। তোমাদের রাজা তৃতীয় জর্জকে যতই স্বেচ্ছাচারী বলোনা কেন, তার কয়েকটা গুনের মধ্যে একটা হলো-- সে ১৮০১ সালে আয়ারল্যান্ডকে ইংল্যান্ডের অধীনে আনে। এবং যুক্তরাজ্য গঠন করে। যদিও ১৯২২ সালে আয়ারল্যান্ড স্বাধীনতা লাভ করবে। তখন যুক্তরাজ্য বলতে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডকেই বুঝাবে। তুমি অবাক হলে বুঝি! আমার দার্শনিক চিন্তায় এগুলো বলে।"
রসিক সত্যিই অবাক হলো। কান্ট ১৯২২ সালের ঘটনা এখন কিভাবে জানে। পরাবাস্তবের ব্যাপারটা ঘটছে নাকি! হয়ত রসিকের চিন্তা ও কান্টের ভাবনার সাথে মিশ্রন ঘটছে।
রসিক এতক্ষণ কান্টের কথায় শুধু সায় দিচ্ছিল। কিন্তু একটা কথা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। কান্ট কোন সময় একা থাকেনা। তার বান্ধবী জুলিয়া সবসময় তার সাথে থাকে। কিন্তু আজকে একা কেন?
কান্ট ও জুলিয়ার নিষিদ্ধ প্রেম নিয়ে পত্রিকায় ফলাও করে খবর বেরিয়েছিলো। কান্টকে রীতিমত সমালোচনার শিকার হতে হয়।
রসিক দ্বিধাদ্বন্দ ঝেড়ে কান্টকে জিজ্ঞাসা করলো," জুলিয়া কোথায়?
- জুলিয়ার সাথে আমার সাম্প্রতিক বিচ্ছেদ হয়েছে।
- কি কারনে?
- ও পর্ব থাক। বলতে লজ্জা পাচ্ছি।
- লজ্জা পাচ্ছেন কেন! আমি কোলরিজ আপনার সামনে দাঁড়িয়ে। আপনার ঘনিষ্ট মানুষ।
- তা ঠিক
- তবে বলুন। আমার মাথায় এমনিতে অনেককিছু গিজগিজ করছে। এ ব্যাপারটা না জানলে মস্তিষ্কের ঠিকমত ইলেক্ট্রোসিগন্যালের অভাবে হয়ত পাগল হয়ে যাবো। কি ভয়ংকর! বুঝতে পারছেন!
- তোমার আফিম খাওয়াটা কমাও। এটা মূল সমস্যা। দেখা যাচ্ছে - অতিপ্রাকৃত শক্তির বলে তুমি মহশূন্যে একদিন বিস্ফোরিত হবে।
- আপনি কিন্তু প্রসঙ্গ পাল্টানোর চেষ্টা করছেন। মনে রাখবেন আপনি দার্শনিক আর আমি কিন্তু সুপারসনিক।
- জুলিয়াকে আসলে আমি শেষ দিকে তেমন সঙ্গ দিতে পারতামনা। বয়সের ভারে আর কত পারা যায়!
- তাই নাকি!
- সে এখন ভূমধ্যসাগরের দ্বীপ সাইপ্রাসের নিকোশিয়াতে আছে। যে দ্বীপটি নিয়ে গ্রীস আর তুরষ্কের মধ্যে বিরোধ চলছে। তার একটা ইয়াং বন্ধু জুটেছে। সুখে দিন কাটছে।
- তাই বলে ১৫ বছরের দাম্পত্য ছেড়ে চলে যাওয়া তার উচিৎ?
- এটাই প্রকৃতির নিযম
- আপনার বাচ্চাটা কোথায়। অবৈধ সন্তান হিসেবে যার নিয়ে রটেছিলো?
- সবার থেকে গোপন রেখেছি তাকে। সে এখন ক্যামব্রীজে পড়ে।
- ভালো করেছেন। আপনি চাইলে জুলিয়াকে আমি হাজির করবো। বলুন।
- না থাক 😗
কান্টের বিদায়ের পরেই রসিকের মাথায় উইলিয়াম শেক্সপিয়রের চিন্তা ঢুকলো। শেক্সপিয়র নিয়ে অনেক প্রশ্ন বিসিএসে আসে। এর একটা সুরাহা করা দরকার। ভাবা মাত্রই শেক্সপিয়র স্বশরীরে উপস্থিত। ইংল্যন্ডের জাতীয় কবি। ২৩ এপ্রিল ১৫৬৪ ইং- ২৩ এপ্রিল ১৬১৬। জন্ম startfort-upon- avon. এভোন নদীর তীরে। তাকে bird of avon বলা হয়। আরো অনেক পদবীতে ডাকা হয়। যেমন - father of english drama, King without crown. "Poet of Human nature" হিসেবে অভিহিত করেছেন D. Samuel Johnson.
তারা এভন নদীর তীরে হাওয়া খাচ্ছে আর আলাপ করছে। শেক্সপিয়রের সাথে তার থেকে আট বছরের বড় স্ত্রী এ্যানি হ্যাথওয়ে এসেছে। ১৮ঃ২৬। আরও এসেছে অবৈধ সন্তান সুসান। জমজ সন্তান হ্যামলেট ও জুডিথ।
শেক্সপিয়রের লম্বা চুল এভনের বাতাসে উড়ছে। দেখতে দারুন লাগছে। রসিক ভাবছে এই সেই শেক্সপিয়র! একেবারে জীবন্ত শেক্সপিয়র। রসিক তড়িঘড়ি করে মনে জমানো অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার জন্য প্রস্তুত হলো। এমন সময় শেক্সপিয়র কোলরিজরূপী রসিককে থামিয়ে বললো," তোমাকে অভিনন্দন, Lake poet হিসেবে ভূষিত হওয়ার জন্য। আরও দুজন Lake poet ওয়ার্ডসওয়ার্থ ও রবার্ট সাউদীকে আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ো।"
শেক্সপিয়র কোলরিজের কথার সুযোগ না দিয়ে কথা বলতেই আছে। তার কথাগুলো তার নাটকের সংলাপের মত জীবন্ত লাগছে!
" তোমার মত কোলরিজ এক হাজার বছরে একটা জন্মেনা। জানো। আমি গর্ববোধ করি তুমি আমার লেখা পড় এবং আমাকে নিয়ে লেখালেখি করো। তোমার Quotes গুলো আমার খুব মনে ধরে। আমি মুখস্ত করেছি। আহা! কেমন supernaturalism উক্তি...
*water, water every where
nor any drop to drink. ( Alliteration)
* Alone, alone, all, all alone
alone on a wide, wide sea. ( assosance)
* He prayth best who loveth best
All things both great and small
ভাবার্থঃ জীবে দয়া করে যে জন, সে জন সেবিছে ঈশ্বর। (স্বামী বিবেকানন্দ)🤫
শেক্সপিয়র বিদায় হলো। কিন্তু রসিককে কথা বলার সুযোগ দিলোনা! সে বাতাসে উড়ে যাওয়া এ্যনির অগোছালো চুল গোছাতে ব্যস্ত! হুম! শেক্সপিয়র একগুঁয়ে মার্কা লোক। বুঝাই যাচ্ছে। শেক্সপিয়রের সাথে অনেক কথা বলার ছিলো। সুযোগ মত বলতে হবে। কিন্তু পরাবাস্তবেও সময় সযোগের অভাব হয়! রসিকের জানা ছিলোনা।
সমসাময়িক আর কি ভাবা যায়। রসিক পরাবাস্তবের আয়নাটি হাতে নিলো। এবং নিজেকে একই সাথে কয়েক জায়গায় আবিষ্কার করলো। তারমধ্যে একটা হলো ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। রসিক ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এটি কলকাতার লালবাজারে অবস্থিত। এর স্মৃতি স্তম্ভে লেখা আছে- এটি ১৮০০ সালের ৪ মে ব্রিটিশ গভর্ণর জেনারেল ওয়েলেসলি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত। ২৪ নভেম্বর কার্যক্রম শুরু। বাংলা বিভাগ খোলা হয় ১৮০১ সালে। ওয়েলেসলির আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো- শ্রীরামপুর মিশন স্থাপন করা। এটিও ১৮০০ সালে প্রতিষ্ঠিত। এখান থেকে বিভিন্ন বিখ্যাত গ্রন্থ ছাপানো হয়েছে। ফোর্ট উইলিয়ামে বাংলা, আরবী, ফারসী ও উর্দু বিষয়ে প্রথম শিক্ষাদান শুরু হয়। এর স্বর্ণযুগ ছিলো ১৮০১- ১৮১৫ সাল পর্যন্ত। ঈশ্বরচন্দ্র এ কলেজের হেড পন্ডিত ছিলেন ১৮৪১-১৮৪৬ সাল পর্যন্ত। কলেজের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৮৫৪ সালে ডালহৌসির হস্তক্ষেপে।
বিকেলটা প্রায় শেষের দিকে, সন্ধ্যা আসন্ন। রসিক উইলিয়াম ফোর্ট কলেজের অধ্যক্ষ উইলিয়াম কেরীর কক্ষে প্রবেশ না করে দরজার খোলা আংশ দিয়ে ভিতরের পরিবেশটা দেখছে। কেরীর মাথার সামনের অর্থেকটা টাক পিছনের অর্থেকটায় চুল আছে। এই সেই কেরী, বাংলার সাহিত্যে যার অবদান অনেক। মহৎ, সৃজনশীল ও উদার প্রকৃতির লোক। রোমান্টিকও বটে। রসিক নিজেকে আরো একবার ধন্য অনুভব করলো। ঘরটিতে পিনপতন নিরবতা। আবছা অন্ধকারে প্রদীপ জ্বলছে। লেখার উপযুক্ত পরিবেশ! কেরী সাহেব ধ্যানমগ্ন ভাবে লিখে চলেছেন। ধ্যানের মধ্যেও ঠোঁটে কেমন হাসি!
রসিক কাশি দিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। কেরী সহজেই কোলরিজকে চিনতে পারলো। কুশল বিনিময়ের পরে রসিক বসলো। কালের দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি এক ঘরে। যেন এক ইতিহাস। দুজনেই খোশ মেজাজে। কথোপকথন শুরু হলো তাদের মধ্যে।
রসিক বললো," আপনি কি লিখছেন"
- বাইবেলের অনুবাদ মঙ্গল সমাচার, গ্রামার অব দি ব্যাঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ ও কথোপকথন শেষ করে ইতিহাসমালা শুরু করেছি।
- খুব ভালো
- ধন্যবাদ
- আমি আপনার কথোপকথন পড়েছি। অনেকটা রোমান্টিক। ক্ল্যাসিক বই। বই পড়ে মনে হলো আপনি প্রেমে পগেছেন। ঘটনাটি কি সত্যি?
- রোমান্টিক বই লিখলেই লেখক প্রেমে পড়েছে আপনার মনে হয়?
- না, তা নয়! লেখাটা জীবন্ত মনে হলো। তাই
- প্রশংসার জন্য আবরো ধন্যবাদ
- তবে আমি সোজাসাপটা বলতে পছন্দ করি। আপনি রাম রাম বসুর মেয়ে অপর্ণার প্রেমে পড়েছেন। সন্ধ্যায় অপর্ণার তুলসি গাছে প্রণাম করার পর আপনি তার সাথে অভিসারে যান। যদিও আজকের সন্ধ্যাটা ভিন্ন। আমার অতিপ্রাকৃত শক্তি তাই বলে। সেজন্যই রাম রাম বসুকে আপনার মুন্সি ( কেরী সাহেবের মুন্সি) বলা হয়। তাই না।
- আপনার kubla khan পড়ে আমি বিমুগ্ধ হয়েছি। সত্যিই আপনি যাদু জানেন।
- আপনি প্রসংগ পাল্টাচ্ছেন।
কেরী সাহেব কি বলবে বুঝে উঠে পারছেনা," কি যে বলেন। আমি রাম রাম বসুর প্রথম মৌলিক গ্রন্থ "প্রতাপাদিত্য চরিত " ও "লিপিমালা" বই দুটির প্রশংসাস্বরূপ তাকে শ্রদ্ধা করি। এছাড়া কিছু নয়। তাছাড়া রামরাম বসু আমার বন্ধুর মত। বন্ধুর মেয়ের সাথে প্রেম! এটা অমূলক ছাড়া কিছু নয়।"
- আপনি চন্দ্রাবতীর সাথেও প্রেম করেছেন। আমি জানি।
-কোন চন্দ্রাবতী
-বাঙালী কবি দ্বীজ বংশী দাস যিনি মনসামঙ্গল রচনা করেন তার মেয়ে।
-আচ্ছা, বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর কথা বলছেন। যিনি রামায়নের বাংলা অনুবাদ করেন!
- হ্যা, তাই
- হাহা সে ষোড়শ শতকের কবি। আমি হচ্ছি উনিশ শতকের মানুষ। তার লেখার প্রেমে পড়া যায়। তার সাথে কিভাবে?
- আমাকে বোকা বাবেননা, আপেক্ষিত তত্ত্বের একটা ব্যাখ্যা আমার কাছে আছে। যেটা দিয়ে এ প্রেম সম্ভব।
- আপনার আফিমের ডোজটা ইদানিং বেশি চলছে বুঝা যাচ্ছে।
- প্রধান পন্ডিত মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালংকারের ৫ টি বই - বত্রিশ সিংহাসন, হিতোপদেশ, রাজাবলী, বেদান্তচন্দ্রিকা ও প্রবোধচন্দ্রিকার সৌজন্য কপি সংগ্রহ করার সময় আপনার মেয়ের সাথে হঠাৎ দেখা। সে আপনাকে খোঁজ করছিলো। আমি পরাবাস্তবের বলে বুঝতে পারলাম আপনার প্রতি তার গভীর প্রেম।
কেরী সাহেব ইতস্তত বোধ করলো," আমার দ্বিতীয় পন্ডিত রামনাথ বাচস্পতি, আরও ছয়জন সহকারী পন্ডিত আছেন। তাদের বই কি পেয়েছেন। বিশেষ করে --হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর "পুরুষ পরীক্ষা" ও চন্ডীচরণ মুন্সির "তোতা ইতিহাস "সংগ্রহে থাকাটা ভাল।"
- আপনার বইও সংগ্রহে রাখতে চাই। বিশেষ করে আপনার প্রেম নিয়ে অতিপ্রাকৃতিক কিছু লেখার মনস্থ করেছি। আপনার ঠোঁটের অমলিন হাসি প্রমান করে আপনিও অপর্ণার প্রেমে নিমগ্ন। এখন আপনার স্বীকারোক্তির আশা করছি।
কেরী সাহেব কোলরিজের অতিপ্রাকৃত লেখার কথা শুনে লোভ সামলাতে পারলোনা। কোলরিজের মত বিখ্যাত কবি তাকে নিয়ে লিখবেন। সৌভাগ্যের বিষয়।কেরী অকপটে তার প্রেমের কথা স্বীকার করলেন।এক চন্দ্রিমা রাতে অভিসারের পর গঙ্গার জলে তার ও অপর্ণার শুদ্ধি স্নানের কাহিনীও বললেন। 😍
কথার এক পর্যায়ে কেরী সাহেবের রুমে খসখস শব্দ শোনা গেল। কোলরিজ পেছন ফিরে তাকাল। ওমা! অপর্ণা উপস্থিত। ভালবাসার টান বলে কথা। অপর্ণা কখন এসেছে কে জানে! অপর্ণা কেরী সাহেবের কাছে আসতেই কেরী উঠে দাঁড়ালো। আজ সন্ধ্যায় তুলসি গাছে প্রণাম শেষে কেরী সহেবের কোন খোঁজ পায়নি অপর্ণা। তাই মনকে প্রবোধ দিতে না পারায় প্রেমিকের কাছে ছুটে এসেছে। অপর্ণার কথায় অভিমান ঝরে পড়লো।
রসিক জানালা খুলে দিলো। জ্যোৎস্না এতক্ষণে বিকশিত হয়েছে। জানালা দিয়ে জোছনা ফুরফুর করে প্রবেশ করে ঘরটিকে মুহূর্তে আলোকিত করেছে। জ্যোৎস্নায় পাতলা গড়নের অপর্ণাকে অপূর্ব লাগছে। যৌবনের কাঁচাসোনা রং তার সর্বাঙ্গে। সেখানে অর্ধটাক বয়স্ক কেরী একটু বেমানানই বটে। অপর্ণা এমন বয়স্ক কেরীকে কিভাবে পছন্দ করলো! প্রেমের কাছে কোন বয়স নেই। মনই বড়।👍
প্রেমিকযুগলকে নিরিবিরি সময় দেয়া দরকার। রসিক কেরী সাহেবের সাথে কথোপকথন দীর্ঘায়িত না করে বাইরে বেরিয়ে এল। এবং নিজেকে কুবলাই খানের জানাডুর রাজ্যে মেরী ইভান্স ও ওয়ার্ডওয়ার্থের সাথে আবিষ্কার করলো। এটা কেমন কথা! সে একই সময়ে জানাডুর রাজ্যে ওয়ার্ডওয়ার্থের সাথে, দার্শনিক কান্টের সাথে, শেক্সপিয়রের সাথে এবং উইলিয়াম কেরীর সাথে নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পাচ্ছে। সাব এটমিক পার্টিকেলের মাধ্যমে এটা সম্ভব। তার মধ্যে কি কোন সাব এটমিক পার্টিকেল আছে। নাকি অতি প্রাকৃতের শক্তিবলে হচ্ছে। রসিকের মনে খটকা লাগছে।
মেরী ইভান্স কুলরিজের চোয়ালের চুমু দেয়ার পর বলল," কুলরিজ, ছয়বছর বয়সে রবিনসন ক্রুসো পড়ার কথা এখনো কি তোমার মনে পড়ে?"
ততক্ষণে পাশে দাঁড়ানো ওয়ার্ডওয়ার্থ কুলরিজের চোয়ালে লিপস্টিকের ABCD চিহ্ন দেখে রহস্যজনকভাবে কাশি দিলো। রসিকরূপী কুলরিজ ভালোভাবে জানেনা ইভান্স ও ওয়ার্ডওয়ার্থের সাথে তার আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ। সে ইতস্তত বোধ করলো। কি করা যায়! এখন তার উচিৎ বন্ধুর লজ্জিত চেহারা দেখে তার রক্তিম চেহারাটাও লজ্জার ভাব আনা। কোলরিজ বোধহয় তাই করতো। রসিক শুকনো ও লাজুক দৃষ্টিতে চোখ পিটপিট করতে লাগলো এবং মুখ থেকে লিপস্টিকের ABCD রঙ মুছার চেষ্টা করলো। এমনসময় ছোট মেয়েটি তাকে প্রশ্ন করে বসলো, " ঐ A B C D এর মানে কি?"
কেলরিজ মনে মনে ভাবলো, ইভান্স কি তাহলে লিপস্টিকের চিহ্ন দিয়ে তাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে? তিনজনই ছোট মেয়েটির কথা শুনে লজ্জা এ রহস্যের সংমিশ্রণে হাসলো। কোলরিজকে, ইভান্সের প্রশ্নের উত্তর বাতিল করে ছোট মেয়েটির উত্তর দিতে হলো। রসিক কোলরিজের মত গাম্ভীর্যতার ভাব নিয়ে, বুক ফুলিয়ে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলো,"এগুলো আমার লেখা বইয়ের নামের প্রথম অক্ষর।
A= Ancient mariner ( এখানে Albatross পাখির উল্লেখ আছে)
B= Biographia Literaria ( criticism)
C= Cristabel (অস্ম্পূর্ণ)
= Kubla Khan ( আফিম খেয়ে স্বপ্নে পাওয়া কবিতা; অসম্পূর্ণ)
D= Dejection: An ode
=Day Dream,
=Devil's thought,
= Destiny of nation"👍
ছোট মেয়েটির প্রশ্নের উত্তর দিয়ে রসিক এই প্রথম একটু গর্বিত অনুভব করলো। কারন এই প্রথম বিসিএস সে বুঝতে শুরু করেছে। ভাসা ভাসা জিনিসগুলো স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। তার মগজ খুলতে শুরু করেছে নাকি! আফিমে বোধহয় কাজে দিচ্ছে!
.......(চলবে ইনশাআল্লাহ)
বিসিএস গবেষণামূলক একটি কল্পকাহিনী। সাথে থাকুন....😍😍😍
শেয়ার করুন...
।।কপিরাইট লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।