মানুষ মাত্রই ভুল, তাই স্বাভাবিক ভাবেই জাবেদা দাখিলা দেয়ার সময় টুকটাক ভুল হয়ে যেতে পারে। সেই ভুল পরবর্তী তে উদঘাটিত হলে তা সংশোধন করার জন্য সাধারণ জাবেদার ফরম্যাটেই আবার দাখিলা দেয়া হয়, এটাই সংশোধনী জাবেদা।
পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতে পারে এই সংশোধনী জাবেদা হিসাব চক্রের কোনো ধাপ কিনা কিংবা কেমন ধাপ। মনে রাখবে এটা হচ্ছে হিসাব চক্রের #পরিত্যাজ্য_ধাপ। এখন তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এটা আবার কেমন ধাপ, এমন ধাপের নাম তো আগে কখনো শুনিনি। তাই এই ‘পরিত্যাজ্য ধাপ’ টার্ম টা আসলে কি এই জিনিস টা বুঝার চেষ্টা করো, তাহলে আর এটা কেমন ধাপ ওটা মনে রাখা নিয়ে সমস্যা হবে না। পরিত্যাজ্য শব্দটার অর্থ হচ্ছে যা ত্যাগ করা উচিত। একটু চিন্তা করে দেখো যে আসলে সংশোধনী জাবেদা কখন তৈরি করা হয়, যখন হিসাব নিকাশে কোনো ভুল হয় তখন ই তো তৈরি করা হয়। এখন তুমি কি কখনো চাবা যে তোমার প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক ইচ্ছা করে ভুল করুক? তারপর সে ভুলগুলা খুঁজে বের করে তার সংশোধনী জাবেদা দেক? অবশ্যই তুমি তোমার প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিকাশে ভুল যতটা সম্ভব কম হোক এটাই চাবা। অর্থাৎ তুমি ভুল কে এভয়েড করতে চাবা। আর ভুল কে এভয়েড করা মানে ভুলের জন্য তৈরিকৃত সংশোধনী জাবেদাকেও এভয়েড করা, আর এজন্যই সংশোধনী জাবেদা কে পরিত্যাজ্য ধাপ বলা হয় যেটাকে যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা হয়। একান্ত প্রয়োজনের সময় (ভুল হয়ে গেলে) শুধু এটা তৈরি করা হয়, তাই এটা কোনো আংশিক কিংবা ঐচ্ছিক ধাপ নয় বরং এটা হলো পরিত্যাজ্য ধাপ।
এখন আসি এই টপিক থেকে কেমন ম্যাথ আসবে তার ব্যাপারে। একটা জাবেদা তৈরি করার সময় কোনো এক জায়গায় ভুল হয়েছে, তোমাকে সেটার সংশোধনী জাবেদা করতে বলবে। এখন ভুল টা টাকার অংকে থাকতে পারে, মানুষের নামে হতে পারে, হিসাবের শ্রেণি তে হতে পারে ইত্যাদি। তোমাকে জাস্ট ওই জায়গার ভুল টা বুঝে তার সংশোধন করে আরেকটা জাবেদা দিয়ে দিতে হবে। এই ভুল সংশোধন করে দুই ভাবে দাখিলা দেয়া যায় –
ভুল জাবেদা কে উল্টা করে সংশোধনী দাখিলা দেয়া অথবা
ভুল জাবেদা কে উল্টা না করে সংশোধনী দাখিলা দেয়া।
একটা করে উদাহরণ দেখলে জিনিস টা সহজে বুঝতে পারবে।
হিসাবের শ্রেণী তে ভুল করলে-
মনে করো, পাওনাদার কে ৮,০০০ টাকা পরিশোধ করার পর সেটার জাবেদায় ভাড়া হিসাব কে ৮,০০০ টাকা দিয়ে ডেবিট এবং নগদান হিসাব কে ৮,০০০ টাকা দিয়ে ক্রেডিট করা হয়েছে, অথচ নিয়ম অনুযায়ী পাওনাদার হিসাব কে ডেবিট করার দরকার ছিল। এখানে পাওনাদার হিসাব হলো দায়বাচক হিসাব এবং ভাড়া হিসাব হলো ব্যয়বাচক হিসাব। এমতাবস্থায় তোমার পাওনাদার হিসাব যেটা এন্ট্রি করাই হয় নি সেটা এন্ট্রি দিতে হবে এবং ভাড়া হিসাব যেটা হওয়ার কথা ছিল না তবু এক্সট্রা এন্ট্রি হয়ে গেছে সেটা কমিয়ে দিতে হবে।
এখন সমাধানের সময় যদি তুমি সম্পূর্ন জিনিস টা আবার করতে চাও (১ম পদ্ধতি) তাহলে তোমাকে ২ টা দাখিলা দিতে হবে।
প্রথমে আসলে যেটা হওয়া উচিত ছিল সেটা –
পাওনাদার হিসাব Dr. ৮,০০০
নগদান হিসাব Cr. ৮,০০০
তারপর অতিরিক্ত ভাড়া কে কমানোর দাখিলা
নগদান হিসাব Dr. ৮,০০০
ভাড়া হিসাব Cr. ৮,০০০
আর ২য় পদ্ধতি অনুযায়ী পাওনাদার এবং ভাড়া এই দুইটাকে কমিয়ে দিলেই হয়ে যাবে, এখানে নগদান হিসাব নিয়ে কিছু করতে হবে না। অর্থাৎ,
পাওনাদার হিসাব Dr. ৮,০০০
ভাড়া হিসাব Cr. ৮,০০০
পাওনাদার/দেনাদারের নাম ভুল থাকলে
রহিম নামক দেনাদারের কাছ থেকে ৮,০০০ টাকা পেয়ে সেটা ভুলবশত করিমের নামে ক্রেডিট করা হলো, এর ফলে রহিম হিসাবের তো কোনো চেঞ্জ হলোই না উল্টা করিম হিসাব ৮,০০০ টাকা কমে গেলো, এখন তোমাকে করিম হিসাব যেটা কমে গেছে সেই ৮,০০০ টাকা বাড়াতে হবে এবং রহিম হিসাব থেকে ৮,০০০ টাকা কমাতে হবে, অর্থাৎ
করিম হিসাব Dr. ৮,০০০
রহিম হিসাব Cr. ৮,০০০
টাকার অংকে ভুল করলে
ভুলবশত কোনো দাখিলায় টাকার পরিমাণ কম বা বেশি লেখা হয়ে যায়, যদি কম লেখা হয়ে থাকে তাহলে ওই দাখিলা টাই আবার দিতে হবে এবং তবে যতটুকু টাকা কম লেখা হয়েছে শুধু ততটুকু এন্ট্রি করতে হবে। যেমন ৯,০০০ টাকা বেতন প্রদান করে ৯০০ টাকা এন্ট্রি করা হলো, এখানে যে ৮,১০০ টাকা কম দেখানো হলো সেটা আবার সেম দাখিলায় এন্ট্রি করে দিতে হবে। অর্থাৎ
বেতন হিসাব Dr. ৮,১০০
নগদান হিসাব Cr. ৮,১০০
আর যদি টাকার এন্ট্রি বেশি হয়ে থাকে তাহলে
জাবেদা টা উল্টা করে এক্সট্রা টাকা কমিয়ে দিতে হবে।
৯,০০০ টাকার বেতন টা যদি ৯০,০০০ লেখা হয়ে থাকে তখন বেতন হিসাব ৮১,০০০ কমিয়ে জাবেদা দিতে হবে। অর্থাৎ
নগদান হিসাব Dr. ৮১,০০০
বেতন হিসাব Cr. ৮১,০০০
এগুলো ছিল দুইতরফা ভুল অর্থাৎ ডেবিট ক্রেডিট দুই পাশেই ভুল হয়েছে। কিন্তু যদি এমন হয় যে ভুল টা একতরফা তখন ওই ভুল রিলেটেড হিসাব টা ডেবিট/ক্রেডিট যা করা লাগে করে অন্যটা করে অনিশ্চিত হিসাব দিতে হবে। যেমন: রহিম কে বেতন প্রদান করে শুধু তার হিসাব ক্রেডিট করা হয়েছে, কিন্তু তার হিসাব টা ডেবিট করার কথা ছিল, তাই এর সমাধান হবে
বেতন হিসাব Dr.
অনিশ্চিত হিসাব Cr.
পরীক্ষায় এই টপিক রিলেটেড আরেকটা জিনিস আসতে পারে সেটা হলো ভুলের প্রভাব।
কোনো একটা ভুলের জন্য কোন শ্রেণির হিসাবে কি প্রভাব পড়ছে বা কি পরিবর্তন হচ্ছে সেটা।
যেমন নগদে ৪৫,০০০ টাকার পণ্য বিক্রয় করে ৫৪,০০০ টাকা লেখা হলো। এক্ষেত্রে নগদান হিসাব নামক সম্পদ বেশি দেখানো হয়েছে ৯,০০০ টাকা এবং এবং বিক্রয় হিসাব নামক আয় বেশি দেখানো হয়েছে ৯,০০০ টাকা,
আজকের আলোচনায় কারো কোনো টপিক কিংবা কোনো স্পেসিফিক টার্ম বুঝতে সমস্যা হলে অবশ্যই কমেন্ট এ জানাও, সমাধান করে দেয়ার চেষ্টা করবো।আজকের এই পার্টের আলোচনার ওপর ভিত্তি করে ৫ টা প্রশ্ন দিচ্ছি,ঘড়ি দেখে ৭ মিনিটের মধ্যে সেগুলোর সমাধান বের করে কমেন্ট করে ফেলো, আগামীকাল এর উত্তরগুলো ব্যাখ্যা সহ এডিট করে দিবো।
গুড লাক, পরিশ্রম করতে থাকো
পাওনাদারকে ৫,০০০ টাকা পরিশোধের পর তার হিসাব ডেবিট করা হলে উক্ত ভুলের প্রভাব কী হবে?
১২,০০০ টাকার আসবাবপত্র ক্রয় করে তা ক্রয় হিসাবে এন্ট্রি করা হলে এর সংশোধনী জাবেদা কী হবে?
রানা কে ১,২০০ টাকা পরিশোধ করে পাওনাদার হিসাব ডেবিট করা হলে সংশোধনী জাবেদা কী হবে?
বিজ্ঞাপনের জন্য ৬৭,০০০ টাকা দিয়ে ৭,৬০০ টাকা এন্ট্রি করলে উক্ত ভুলের প্রভাব কী হবে?
নগদে বিক্রয় ৭০০ টাকা যা বিক্রয় হিসেবে ৭০ টাকা লেখা হয়েছে,এর সংশোধনী জাবেদা কী হবে?
Mahtab Ahmed Adib
Department of Management Information Systems, University of Dhaka.
Executive (HRM)- SILSWA
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।