বাংলা সাহিত্যঃ
পদ্যঃ
বিভীষনের প্রতি মেঘনাদ
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
-
-
বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্য রচনা করেন। বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্যের নাম মেঘনাদবধ। যেটি রচয়িত হয় 1861 সালে। এটা আসলে রামায়ণ থেকে নেয়া হয়েছে।আমরা বলতে পারি রামায়ণের আরেক রূপ এই মহাকাব্য। এই মেঘনাদবধ কাব্যের র্মোট নয়টি স্বর্গ রয়েছে।ষষ্ঠ স্বর্গ হলো 'বধো' (বধ)। মেঘনাদবধ কাব্যের ষষ্ঠ স্বর্গ টাই আমাদের বইয়ে কবিতা হিসাবে এসেছে।নাম দেয়া হয়েছে "বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ "।
কবিতার মূলে যাওয়ার আগে একটা গল্প বলে নেই👇👇👇
একটা রাজ্য ছিল অযোধ্যা নামে। এই রাজ্যের রাজা ছিল দশরথ। দশরথ খুবই ভালো ছিল। রাজা দশরথ সম্মানিত ও ছিল।
রাজা দশরথের তিনজন স্ত্রী ছিলঃ
* কৌশল্যা,
* কৈকয়ী,
* সুমিত্রা.।
তিনজন স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও রাজার কোন সন্তান ছিল না। একবার রাজা অশ্বমেধ নামে একটি পূজার আয়োজন করলেন। আর সেই পূজায় খুব সন্তুষ্ট হয় একজন দেবতা আসলো অর্থাৎ এরকম ছিল যে আগুনের কুন্ডলী থেকে একজন দেবতা বেরিয়ে আসলেন। দেবতা রাজাকে আশীর্বাদ হিসেবে এক ধরনের পায়েস দিলো এবং বললো যে এটা যে রাণী খাবে তার সন্তান হবে।
##রাজা দশরথ যেটা করলো সেটা হলো তিনি একজনকে না দিয়ে পায়েস টা তিনজনকেই দিলেন।যার ফলাফল অনুযায়ী তিনজনের ই সন্তান হলো।
★কৌশল্যের সন্তান হলো ---রাম
এখানে বলে রাখি,,,,,
এই যে দশরথ, রাম এরা যারা ছিলো এদের বংশের নাম ছিলো
***রঘু বংশ ***
আর রঘু বংশের শ্রেষ্ঠসন্তান কে বলা হতো রাঘব। আর সে হলো রাম।
★কৌকয়ীর সন্তান হলো----ভরত
★সুমিত্রার ছেলে ছিলো----লক্ষণ,শত্রুঘ্ন।
তিনরাণি সতীন হলেও এদের সম্পর্ক ছিলো বোনের মত।আর সন্তানেরাও সকল রাণীকে সৎমা হওয়া সত্বেও নিজের মায়ের মতই ভালোবাসতো।
যেহেতু রাম বড় সন্তান তাই সাধারণ ভাবেই রাজা দশরথ মারা গেলে রামেরই রাজা হওয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু এদিকে এক কুটনী বুড়ির প্ররোচনায় রাণী কৌকয়ীর মনে ইচ্ছা জাগলো রাজমাতা হওয়ার।
রাণী কৌকয়ী রাজার কাছে বর বা পুরুষ্কার পেতো। একবার রাজা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন আর রাণি কৌকয়ী তখন নিজ হাতে সেবা যত্ন করে রাজাকে সুস্থ করে তোলে তাই রাজা তাকে বলেছিলো সে যা চায় রাজা তাকে তাই দিবে।কিন্তু রাণী বলেছিলো সময় হলে চেয়ে নেবে।
সেই অনুযায়ী রাণি কৌকয়ীর মনে যখন রাজমাতা হওয়ার ইচ্ছা জাগলো তখন সে রাজার কাছে আরজি করলো রাজার পর যেনো ভরত কে রাজা করা হয়।কিন্তু রাজা এতে কিছুতেই রাজী হলোনা। তাই রাণী আবার চাইলো রামকে যেনো বনবাসে পাঠিয়ে দেয়া হয়।কারণ যদি রাম না থাকে তাহলে পরের ভাই হিসেবে ভরতই রাজা হবে আর রাণী কৌকয়ী রাজমাতা হতে পারবে।
কিন্তু রাজা এতেও রাজী হলেন না কারণ এটা অন্যায় ছিলো। কিন্তু রাম যখন শুনলো তার মা চায় সে বনবাসে যাক সে সিদ্ধান্ত নিলো সে বনবাসে চলে যাবে।
রামের স্ত্রী ছিলো সীতা। রাম বনবাসে যাবে তাই সেও বনবাসে যাওয়ার জন্য তৈরী হলো।এদিকে রামের আরেক ভাই রাণী সুমিত্রার ছেলে লক্ষণ রামকে অনেক ভালোবাসতো।তাই ভাইয়ের সাথে সেও বনবাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।
তারপর,,,, রাম,সীতা,এবং লক্ষণ বনবাসে চলে গেলো।তারা যেই বনে গেলো সেখানে একটি কুঁড়েঘর বানিয়ে থাকতে লাগলো।
তারা যেই বনে থাকতো তার পাশে একটি সাগর ছিলো,,,ভারত সাগর হবে হয়তো।
আর নদীর ওইপাশে ছিলো আরেকটি রাজ্য
লঙ্কাপুরী। এটি তখনের সবচেয়ে বড় রাজ্য ছিলো।লঙ্কাপুরীর আরেক নাম ছিলো কনকরাজ্য। ওই রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে সোনা ছিলো তাই এটাকে কনক রাজ্য বলা হতো। আমরা জানি,,,,কনক মানে সোনা বা স্বর্ণ।
এই রাজ্যের রাজা ছিলো ----রাবণ।
আমরা জানি,,, রাবণ হলো রাক্ষসদের রাজা।
তার মা ছিলো একজন সতী মহিলা যার নাম ছিলো---- নিকষা।
এজন্য তাকে নিকষা সতী বলা হতো।
এই রাবণ রাজার আরো দুই ভাই ছিলো।
১/ কুম্ভকর্ণ ---- কুম্ভকর্ণ ছিলো বিশালদেহী একজন রাক্ষস। সে ৬ মাস ঘুমাতো। আর এতটাই বিশালদেহী ছিলো যে তাকে ঘুম থেকে ধাক্কা দিয়ে জাগাতে বেশ কয়েকটা হাতীর দরকার হতো।এই কুম্ভকর্ণকে শম্ভুর শক্তির সাথে তুলনা করা হতো।আমরা জানি হয়তো যে,, শীবকে শম্ভু বলা হয়।আর শিবের হাতে একটি ত্রিশুল থাকে।
এজন্য কুম্ভকর্ণকে বলা হতো----- শূলীশম্ভুনিভ।
২/রাজা রাবণের আরেক ভাই ছিলো --- বিভীষন। বিভীষন তখনকার সময়ের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তি ছিলেন। সে কখনো অন্যায়ের কথা বলতোনা।
আর এদের এক বোন ছিলো।যে আসলে সব সমস্যার মূল😠😠😠।
এই বোনের নাম ছিলো --- শূর্পনখা।
তো আবার কাহিনী তে ফিরে আসি। এই যে শূর্পনখা সে রাজ্যে বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে যেতো। তাই সে নদীর ওপারের বনে মাঝেমাঝে ঘুরতে যেতো।এবার সে যখন ঘুরতে গেলো সে রামকে দেখতে পেলো।আর রামকে তার ভালো লেগে গেলো। যার কারণে সে রামকে প্রপোজ করল😲😲😲।কিন্তু রাম তাকে প্রত্যাখ্যান করে দিলো এবং বললো তার একজন স্ত্রী আছে এটা কখনোই সম্ভব নয়,,,😟😟
।এরপরে শর্পূনখা যখব লক্ষণ কে দেখলো তখন লক্ষণকেও তার ভালো লেগে গেলো 😒😒। তাই সে তাকেও প্রপোজ করলো😵😵।
কিন্তু লক্ষণ ও তাকে প্রত্যাখ্যান করলো এবং সে যখন আরো জানতে পারলো যে শর্পূনখা রামকেও এমন প্রপোজ করেছিলো তখন লক্ষণের রাগ হয়ে গেলো আর সে রাগ করে শর্পূনখার নাক কেটে দিলো😭😭।
শর্পূনখা রেগে গিয়ে রাবণের কাছে নালিশ করলো। রাক্ষস রাজা রাবণ রাম ও লক্ষণের
বিরূদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। আর রাবণ সেই বনে গেলো,, বনে গিয়ে যখন সীতাকে দেখলো সে সীতাকে অপহরণ করতে চাইলো।কিন্তু রাম ও লক্ষণের কারণে তা সম্ভব হচ্ছিলো না। তাই রাবণ বুদ্ধি করে একটি রাক্ষসকে মায়াহরিণের রূপে বনে পাঠালো। রাম হরিণ টি দেখে ধরার জন্য আসলো। কিন্তু যেহেতু এটি মায়াহরিণ তাই ধরা যাচ্ছিলো না। হরিণ টি যদি ডানে থাকতো তীর মারলে বামে চলে যেতো। বামে থাকলে তীর মারলে ডানে চলে যেতো।কয়েকবার এমন করার পর রাম বুদ্ধি করে হরিণ টি যখন বামে ছিলো সে ডানে তীর মারলো হরিণ টা বামেই আসলো আর হরিণের পায়ে তীর টা গেঁথে গেলো তখনই রাক্ষস টার আসল রূপ বের হলো। রাক্ষস টা রামের কন্ঠ নকল করে লক্ষণ আর সীতাকে ডাকতে লাগলো। এদিকে ঘরের মধ্যে শুধু সীতা আর লক্ষণ ছিলো। রামের কন্ঠ নকল করা রাক্ষসের চিৎকার শুনে সীতা বারবার লক্ষণকে যেতে বলছিলো দেখার জন্য। কিন্তু লক্ষণ কোনোভাবেই সীতাকে একা রেখে বের হতে চাচ্ছিলোনা। অবশেষে সীতার অনেক অনুরোধে ঘরের চারপাশে এক ধরনের সার্কেল দিয়ে বের হলো৷ ওই সার্কেল এর ভিতরে কোনো অশুভ শক্তি ঢুকতে পারেনা। লক্ষণ বেরিয়ে যেতেই রাবণ এক মনীষির রূপ ধরে বাইরে থেকে সীতাকে ডাকতে লাগলো কিছু খাবার দেয়ার জন্য। সীতা মনীষি দেখে কিছু খাবার আর পানি নিয়ে মনীষিকে বললো ভিতরে আসার জন্য। রাবণ যখন চেষ্টা করেও ঢুকতে পারছিলোনা সে সীতাকে বললো কাছে এসে দিয়ে যেতে। আর এই মনীষি যেহেতু সার্কেলের ভিতরে ঢুকতে পারছিলোনা তাই সীতা নিশ্চিত হলো যে এটা কোনো অশুভ শক্তি। তাই সে কাছে আসবেনা বলে দিলো। তখন মনীষি রূপী রাবণ সীতাকে ভয় দেখালো যে তোর স্বামী রাম বিপদে পড়বে। স্বামীর প্রতি অভিশাপের কারণে ভয় পেয়ে সীতা মনীষিকে খাবার দিতে আসলো, তখনই রাবণ সীতাকে অপহরণ করে নিয়ে গেলো।
সে অপহরণের পর যুদ্ধ ঘোষণা করলো। সেই যুদ্ধের সেনাপতি ছিলো তার -----
★বড়পুত্র --- বীরবাহু।
কোনো একটা আক্রমণের সময় বীরবাহু মারা যায়।
তাই দ্বিতীয় সন্তান হিসেবে --- মেঘনাদ ই সেনাপতি নিযুক্ত হলো। মেঘনাদ ছিলো খুবই শশক্তিশালী। একবার সে দেবতাদের রাজা ইন্দ্রকে পরাজিত করেছিলো বিধায় তাকে ***👉👉ইন্দ্রজিৎ *** বলা হতো।
ইন্দ্র দেবতার আরেক নাম বাসব। আর এ কারণে মেঘনাদকে ***👉👉বাসবত্রাস*** ও বলা হতো। আর যেহেতু সে শত্রুকে দমন করতে পারদর্শী ছিলো তাই তাকে ***👉👉অরিন্দম *** ও বলা হতো।
তো এই মেঘনাদ যুদ্ধে যাবার আগে এক দেবতার পুজা করতো যে ছিলো অগ্নিদেব। আর সে যেইখানে পুজা করতো সেটার নাম ***👉👉নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগার***।
আগেই বলেছি বিভীষন জ্ঞানী ব্যাক্তি ছিলো সে অন্যায় পছন্দ করতোনা। আর এখানে নরমালি শর্পূনখার জেদ মেটাতে রাজা রাবণ একটা অন্যায় করছিলো যার কারণে রাজ্য ও মানুষ রা বিপদে পড়ছিলো। বিভীষণ তাদের অনেক বুঝাবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলো।
কিন্তু সে এই অন্যায় যুদ্ধের পক্ষে না যেয়ে রাম ও লক্ষণের দলে গেলো,,,যা বাহ্যিক ভাবে নিজ দেশ,জ্ঞাতীর সাথে প্রতারণা।
এদিকে মেঘনাদ যখন নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে পূজারত ছিলো সে সময়ে লক্ষণ মায়াদেবীর সাহায্যে লঙ্কাপুরীতে প্রবেশ করলো। কিন্তু মেঘনাদ পর্যন্ত যাওয়ার পথ কে দেখাবে??
বিভীষণ তাকে সাহায্য করলো। লক্ষণ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করলো মেঘনাদের কাছে গেলো এবং বিভীষণ দরজায় দাড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলো।মেঘনাদ পুজা করতে করতে খেয়াল করলো তার পিছনে কেউ আছে। পিছনে ফিরতেই সে অস্ত্র হাতে লক্ষণ কে দেখলো আর অবাক হয়ে গেলো যে লক্ষণ এখানে কিভাবে আসলো।তারপর সে যখন দরজায় তাকালো সে বিভীষণ কে দেখলো এবং বুঝলো যে এটা বিভীষণের সহায়তায় হয়েছে। তারপর যে কথোপকথন হয়েছে তাই আমাদের বইয়ে উল্লিখিত কবিতা যা নিয়ে দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হবে।
👉👉অনেকের মনে হতে পারে এতক্ষণ আজাইরা বকবক কেন করলাম,,,,,শুনেন,,,,একটা কিছু পড়বেন সেটা যদি নাই বুঝে পড়েন তাহলে তা পড়ে লাভ কি??
গল্পটা জানার পর কবিতা পড়তে সোজা লাগবে,,,,নাইলে কবিতা পড়তে যেয়ে মনে হবে মেঘনাদের জায়গায় আপনাকে বধ করলেই মনে হয় ভালো হতো অন্তত আরেকজনের বধ হওয়ার কাহীনি পড়া লাগতোনা,,,,।নেক্সট পর্বে কবিতা নিয়ে দেখা হবে,,,☺☺
---------------------
ক্রেডিটঃ জাইমা আফনান
ডকডমড ত
উত্তরমুছুনডজডকতৃ
চ
চ
চ
কচৃআ
চকচ
ত
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।