সৌরজগৎ এর সৌর বা Solar System এর Sol এর অর্থ সূর্য, যা প্রাচীন রোমান ভাষা থেকে আগত। অর্থাৎ সূর্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জগতই হচ্ছে সৌরজগৎ বা সোলার সিস্টেম! কিন্তু অন্য নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এমন জগতকে অবশ্যই সৌরজগৎ বলা হতো না! যেমন পোলারিস নক্ষত্রের অধীনে থাকা গ্রহ, উপগ্রহকে হয়তো বলা হবে Polar System! এটা সিরিয়াস হিসেবে নেয়ার কিছু নেই, মজা করলাম! যাই হোক, আমাদের সৌরজগৎ সূর্য নামের একটি মাঝারী আকারের নক্ষত্র ও এর চারপাশে ঘুরতে থাকা ৮টি গ্রহ, এদের উপগ্রহ, বামন গ্রহ, উল্কা, গ্রহাণু, ধুমকেতু ইত্যাদি নিয়ে গঠিত!
আমরা জানি যে এসবকিছুই সূর্যকে কেন্দ্র করে একে নিয়মিত গতিতে প্রদক্ষিণ করছে, কিন্তু আদিম সভ্যতা ভাবতো পৃথিবী ই সবকিছুর কেন্দ্র ও একে কেন্দ্র করেই অন্যান্য নক্ষত্র, সূর্য ও গ্রহ আবর্তন করছে। আমাদের সৌরজগতে সূর্যই সব শক্তির উৎস। তাপ ও আলোর রুপে শক্তি ছড়িয়ে যাচ্ছে এটি সৃষ্টির শুরু থেকেই। আমাদের সূর্য অবস্থান করছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে, আর এটি এই গ্যালাক্সির ২০ হাজার কোটি নক্ষত্রের একটি। সূর্য তাঁর জগৎ নিয়ে প্রদক্ষিণ করছে এই গ্যালাক্সির কেন্দ্রকে! ব্যাপারটা আজব না?
সৌরজগতের উৎপত্তিঃ
সৌরজগতের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহই সৌরজগৎ সৃষ্টি করে। অধিকাংশ বিজ্ঞানী ও গবেষকের মতে আমাদের সৌরজগতের উৎপত্তি সোলার নেবুলা থেকে। বিশাল গ্যাসের স্তুপ অভিকর্ষের টানে একজায়গায় জড়ো হতে থাকে, পরে কেন্দ্রে উৎপন্ন হয় সূর্যের আদি গঠন। এই আদি সূর্যকে ঘিরে চারপাশের বাড়তি গ্যাসগুলো ঘুরতে ঘুরতে চাকতির মতো একটা আকার ধারণ করে। পরে এই গ্যাসীয় চাকতির অধিকাংশ গ্যাসীয় উপাদানই সূর্য নিজের দিকে টেনে নেয়, কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় কিছু গ্যাস আবার ঘনীভূত হয়ে গ্রহ কণা গঠন করে। সব গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু আর ধূমকেতুকে একত্রে গ্রহ কণা বা প্ল্যানেটেসিমাল বলে! সূর্য যখন পুরোপুরি সুগঠিত হয়ে পড়ে ও ফিউশন প্রক্রিয়ায় জ্বলতে শুরু করে, তখন সৌরবায়ুর প্রভাবে আশেপাশের অতিরিক্ত হালকা গ্যাস তথা হাইড্রোজেন, হিলিয়াম ইত্যাদি উড়ে চলে যায়। আর সূর্যের কাছাকাছি থাকা গ্রহগুলোর ওপর থেকে এসব গ্যাসের আস্তরণও সরে যায়। এ কারণে সূর্যের কাছাকাছি থাকা ৪টি গ্রহ কঠিন। এদের স্থলজ গ্রহ বলে। কিন্তু মঙ্গলের পর থেকে বাকি গ্রহগুলোতে সৌরবায়ুর প্রভাব কম থাকায় সেগুলো গ্যাসীয় দানব হিসেবে রয়ে যায় আমাদের সৌরজগতে! এ সবই আল্লাহর ইশারায় হয়।
সৌরজগৎ আবিস্কারঃ
সৌরজগৎ তো শুরু থেকেই ছিল, তাহলে এর আবিস্কারের আবার কি আছে? হ্যাঁ, আগে থেকেই ছিল। কিন্তু তখন একে পর্যবেক্ষণ করার মতো দরকারি উপকরণ ছিল না আমাদের, আর তাই মানুষ বুঝত না নক্ষত্র আর গ্রহের পার্থক্য! শতশত বছর ধরেই মানুষ ছোটছোট আলোর বিন্দুকে রাতের আকাশে নক্ষত্রের মাঝে ঘুরে বেড়াতে দেখত! প্রাচীন গ্রীকরা এর নাম দিয়েছিল Planets, যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় “ভ্রমণকারী”। প্রাচীন মানুষ বুধ, শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি এর খবর জানতো। পরে টেলিস্কোপ আবিস্কারের পর গ্রহাণুপুঞ্জ, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটোর কথা জানতে পারে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত প্লুটো আমাদের সৌরজগতের গ্রহ হিসেবে পরিচিত ছিল, পরে একে বামন গ্রহ হিসেবে পদবনতি দেয়া হয়। কুইপার বেল্ট এ এখন পর্যন্ত এরকম কয়েকশ বামন গ্রহের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে আমাদের সৌরজগতে!
সৌরজগতের উপাদানঃ
আমাদের সৌরজগতের মূল ও প্রধান উপাদান হচ্ছে সূর্য। মোট সৌরজগতের ৯৯.৮% ভর সূর্যের একাই বহন করে। বাকি ০.২% মিলে অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ ইত্যাদি! সূর্যের কাছে থেকে দূরে সাজালে ক্রমানুসারে ৮টি গ্রহ হচ্ছে, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। ইংরেজিতে যাদের নাম Mercury, Venus, Earth, Mars, Jupiter, Saturn, Uranus ও Neptune. পৃথিবী বাদে সবগুলোই রোমান দেবতা ও দেবীর নামানুসারে রাখা হয়েছে। মানে মিথোলজি আর অ্যাস্ট্রোনমি একে অপরের সাথে দারুণ ভাবে জড়িত! অধিকাংশ গ্রহের চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে এদের এক বা একাধিক উপগ্রহ! পরের পর্বে সব গ্রহ নিয়ে বিস্তারিত লিখবো। মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝে বড় একটি জায়গা জুড়ে গ্রহাণুপুঞ্জ রয়েছে। গ্রহাণু হচ্ছে গ্রহের তুলনায় অনেক ছোট অনিয়মিত আকারের পাথরের চাঁই। এরা অনেক ছোট থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার বড় ও হতে পারে। সৌরজগতের আরেকটি উপাদান ধুমকেতু হচ্ছে বরফ ও পাথরের বিশাল পিণ্ড! সূর্যের কাছাকাছি এলে এর কেন্দ্রে থাকা বরফ গলে গ্যাসে পরিণত হতে থাকে, আর তা সৌর বায়ুর প্রভাবে সূর্যের বিপরীতে উড়ে যেতে থাকে। তখন ছুটে চলার সময় মনে হয় এর পেছনে লেজ গজিয়েছে!
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।