পুলিশ ক্যাডার ভাইভা প্রশ্নঃ ক্রসফায়ার সমর্থন করেন ?
ক্রসফায়ারের আইনগত দিক
পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি) অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট অথবা পুলিশ সদর দফতরের পূর্বানুমতি ছাড়া এই সংস্থার সদস্যরা গুলি ছুড়তে পারে না। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে তার ব্যতিক্রম রয়েছে। বিশেষ তিন ধরনের পরিস্থিতিতে পূর্বানুমতি ছাড়া তারা গুলি চালাতে পারে।
ক) মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কোনো আসামী পালানোর চেষ্টা করলে, সেই প্রচেষ্টা রুখতে তারা গুলি চালাতে পারে।
খ) দাঙ্গা দমনকালে প্রথমে হুসিয়ারী, তারপর পর্যায়ক্রমে লাঠিচার্য, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট ছোঁড়া; এর পরেও যদি দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তখন ওই দাঙ্গা রুখতে তারা গুলি চালাতে পারে।
গ) আবার বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে যদি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিঘ্নিত হয় (ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা গুলি চালালে, যা ক্রসফায়ারের ক্ষেত্রে তাদের বহুল আলোচিত ভাষ্য) তা হলে, সেক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা আত্মরক্ষার স্বার্থে তারা গুলি চালাতে পারে।
উপরে বর্ণিত এই তিন ধরনের পরিস্থিতিতে তারা গুলি চালালেও পরবর্তীতে পুলিশ বিভাগের নিজস্ব এক্সিকিউটিভ ইনকোয়ারিসহ বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে। তদন্তের মাধ্যমে উক্ত বিভাগগুলো দেশবাসীকে জানাবে গুলি ছোঁড়া জাস্টিফাইড ছিলো কি না? বিশেষ ক্ষমতা আইনে বা ৫৪ ধারায় যে কাউকে আটক, ১৬৭ ধারায় তথাকথিত স্বীকারোক্তি আদায়; অতঃপর অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়া, কল্পিত ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া এবং কর্তব্যরত অবস্থায় ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালানো। ফলাফল একটাই, উক্ত গুলি বিনিময়কালে শুধুমাত্র ধৃত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটা। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে আটক করা হলে, আইনই হবে তার হেফাযতকারী। তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব সম্পূর্ণই আইনের। এটাই মানবাধিকারের কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে সেটা ঘটেনি। ধৃত ব্যক্তিকে আইন বা আইন রক্ষাকারীবাহিনী নিরাপত্তা দেয়নি। বরং বন্দী অবস্থায় হত্যাকাণ্ডকেই আইনগতভাবে জাস্টিফাইড করা হয়েছে বলে আইনজ্ঞরা মনে করেন।
পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে ধৃত ব্যক্তি যদি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে মারা যায় তা হলে, বিধি অনুযায়ী একটা তদন্ত হবে। তদন্তটি আবার দুটি অংশে বিভক্ত।
একটি অংশ হলো বিচার বিভাগীয় তদন্ত, যা পরিচালনা করার দায়িত্ব জেলায় ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন সিটিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অথবা তাদের নিয়োগকৃত ম্যাজিস্ট্রেটের।
তদন্তের অপর অংশটি নির্বাহী তদন্ত, যা পরিচালনা করার দায়িত্ব পুলিশের এএসপি পদমর্যাদাসম্পন্ন একজন কর্মকর্তার। উভয় তদন্তে যদি গুলি ছোঁড়াটা জাস্টিফাইড হয় তাহলে মামলাটির আইনগত বৈধতা থাকবে না, এটাই রাষ্ট্রীয়বিধী। আর যদি তদন্তে গুলি ছোঁড়াটা জাস্টিফাইড না হয়, তাহলে ওই গুলি ছোঁড়াটা হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে। তখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির পরিবার বা তার আত্মীয়জন অথবা রাষ্ট্র নিজে বাদি হয়ে মামলা করতে পারে।
এখানে লক্ষণীয় যে, গত কয়েক বছর ধরে র্যাব-পুলিশের গুলিতে বা তাদের ভাষায় কথিত ক্রসফায়ারে যতগুলো হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, প্রতিটি মৃত্যুর ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩০৪ ধারায় মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হাতে গোণা ৭-৮ টি মামলা দায়ের করেছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। বাদবাকি মৃত্যুর ক্ষেত্রে বাদী সরকার ওরফে র্যাব বাহিনী বা পুলিশ প্রশাসন।
দণ্ডবিধি ৩০২ ধারাটি হচ্ছে হত্যা অথবা খুনজনিত অপরাধ। আর দণ্ডবিধি ৩০৪ ধারা হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি খুন হয় বা এ-ধরনের অপরাধজনক প্রাণহানি করে অথবা কাজটিতে যদি তার মৃত্যু ঘটে, কাজটি করলে মৃত্যু হতে পারে বলে জানা থাকে, অথচ কাজটি মৃত্যু সংঘঠনের উদ্দেশে করা হয়নি, এমন অপরাধ। এই দুই ধারায় মূলত মামলা হয়েছিল।
Md Shohel Rana (Credit)
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।