টক মিষ্টি ঝাল
লেখকঃ সাইফা আদনান
পর্বঃ ২
ওর চুমু দেওয়া
ওর বউ বলা ওর জড়িয়ে ধরা সবকিছুতেই যেন লুকিয়ে আছে অনেক ভালবাসা।
এই ছ্যাঁচড়া লোকটার সাথে ঝগড়া করলেও , খুব ভালবেসে ফেলেছি।
আদনান আমাকে বললো,
" জানো মেয়ে মানুষের প্রতি কেন যেন রাগ কাজ করে খুব। ওরা মানুষের মন নিয়ে খেলা করে, ছেলেদের সাথে প্রতারণা করে।
আর সুন্দরী মেয়েরা এসব দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে। আর তাই আমি বিয়ে করতে চাইনি। প্রতিটা মেয়েরই কোনো না কোনো দোষ খুঁজে বের করতামই। মা আমার উপর বিরক্ত হয়ে গত এক মাস ধরে মেয়ে দেখা বন্ধ করে দিছে।
আমিও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম।
আনিলা সেদিন তোমাকে দেখতে যাওয়ার কথা বলতেই, মা না করে দেয়। পরে আপু অনেক বুঝিয়ে মাকে নেয়। মা বলে দিয়েছিল, এবারই শেষ। আর না। আমিতো তোমাকে দেখার পর সমস্যা খুঁজছিলাম। কিন্ত তুমি যখন বলো যে ,আমাকে পছন্দ হয়নি। তখন খুব জেদ কাজ করে। তাই জোর করে তখনই তোমাকে বিয়ে করে নেই। আচ্ছা ,সত্যি বলো তো। আমাকে কি তোমার সত্যিই পছন্দ হয়নি??
--: আপনার মতো ছ্যাঁচড়া লোককে পছন্দ করবো আমি?
--: তুমিও কম ছ্যাঁচড়া না। তোমার মতো মেয়েকে বিয়েতে জোর করে রাজি করানো সম্ভব না। কিছু তো একটা হয়েছে।
--: কিছুই হয়নি। ঘুমাবো এখন।
--: ঘুমাও, তবে আমি তোমাকে সম্পূর্ণভাবে স্ত্রীর অধিকার দিতে পারব না। যদি মনে হয়, তুমি অন্য সব প্রতারক,ঠকবাজ মেয়েদের থেকে আলাদা, তাহলে তোমাকে আমি মেনে নিব। জানি এটা অন্যায় তবুও মেনে নিতে হবে তোমাকে।
ইস!! কি কপাল আমার। ও কতো কাছাকাছি শুয়ে আছে আমার। কিন্তু আসলে তো অনেক দূরত্ব আমাদের মাঝে। মনের দূরত্বই আসল দূরত্ব। কিছু কিছু মেয়েদের নাকি সতীত্বের পরীক্ষা দিতে হয় বিয়ের রাতে। আর আমি পড়লাম এ কোন পরীক্ষায়। আল্লাহ আমাকে সাহায্য করো।
যখন কোনো বিষয় নিয়ে খুব ভাবি, তখন আমার ঘুম হয় না ভালো। আজও সেরকম হলো। ভোর রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করে স্রষ্টার দরবারে হাত উঠালাম,
হে আল্লাহ, আমাকে সকল বিপদে ধৈর্য্য ধরার শক্তি দাও। আদনানের ধারনা যেন আমি পরিবর্তন করতে পারি। ওর সাথে যেন আমি সারা জীবন কাটাতে পারি।
ফজরের নামাজ আদায় করে,আদনানকে ডাকতেছি। উফ! কি লোক! এতো ডাকছি কোনো সাড়া নেই। অথচ নামাজের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই , কিছু পানি এনে মুখে ছিটালাম।
আর তখনি চেঁচিয়ে উঠল আদনান, "এই মেয়ে ,তোমার কি কোনো বুদ্ধি নেই। সকালের এতো সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করলা। কাল কতোটা জার্নি করেছি। আজ একটু শান্তিতে ঘুমাবো।
তাও দিচ্ছ না।
--: ওহ! বিয়েতো শুধু আপনার হইছে। আর জার্নিও শুধু আপনিই করছেন । শুনুন এতো ভারী শাড়ি পরে জার্নি করা আমার জন্য আরো কষ্টকর ছিল। আমি উঠতে পারলে আপনি কেন পারবেন না। আর নির্বোধ আমি নই। নির্বোধ তো সে লোক, যে স্রষ্টার এতো নিয়ামত ভোগ করেও স্রষ্টার ইবাদাত করতে আলসেমি করে।
আদনান আর কিছু বললো না। নামাজ পড়তে চলে গেল।
বারান্দায় দাড়িয়ে আছি। মাথা ব্যাথা করছে খুব । এক কাপ চা হলে ভালো হতো।
কিন্ত কাকে বলবো এই সকালে।
একটু পরেই আদনান দুই কাপ চা নিয়ে আসলো বারান্দায়। লোকটাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিলাম। আদনান আমার কাছে এসে দাড়াল। এক কাপ চা আমার হাতে দিয়ে বললো,
--: আমি সকালে জেগেই ছিলাম। ইচ্ছা করেই উঠিনি। তবে তোমার কথাগুলো খুব ভালো লেগেছে। সত্যিই আমরা মানুষ জাতি অনেকটা নির্বোধ আর স্বার্থপর। অফিসের কর্মচারীরা যখন কাজে একটু এলোমেলো করে,তখনই মালিক কত কথা শোনায়। খারাপ ব্যাবহার করে। বাসার মালিক চাকরদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, কাজ করতে দেরী হলেই। আর আমরা কত অন্যায় করি। স্রষ্টা তো কিছুই বলেনা।
আর কিছু না করলেও, আমাদের স্রষ্টার ইবাদাত ঠিক মতো করা উচিত।
--: আসলেই আপনার চিন্তা- ভাবনা খুব সুন্দর। যাই হোক এখন একটু শাশুড়ি মায়ের কাছে যাই।
আনিলা আমাকে দেখেই বলে,
" ও মা! নতুন বউ এত সকালে। আমো তো ভাবছি সারা রাত রোমান্স করবি, আর আজ সারাদিন ঘুমাবি। তা রোমান্স কেমন হলো?
--: এই মেয়ে আমি তোর বিয়াইন লাগি যে এসব জিজ্ঞাসা করছিস। আমি তোর ভাইয়ের বউ।
তা শাশুড়ি মা কোথায়?
তখনই শাশুড়ি মা আসলো। আনিলা বললো,
--: দেখো মা, কতো সকালে উঠছে তোমার বউ মা। আমি হলে তো দুই দিন শুধু ঘুমাতাম।
--: তোর মতো হবে কেন ও। ও অনেক ভোরেই উঠছে। আদনান এসে চা করে নিছে।
--: তাই নাকি। তোমার ছেলে দেখি বউয়ের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।
--: তো তুই এতো সকালে উঠলি কীভাবে।
--: মা,আজ ভার্সিটিতে প্রোগ্রাম আছে।
--: ওহ! কথা বল তোরা।
বলেই শাশুড়ি মা চলে গেলেন।
কিরে আনিলা কীসের প্রোগ্রাম আজ?
প্রোগ্রাম না অন্যকিছু।
--: উফ,জুইঁ আস্তে বল। মারুফ বললো গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। তাই ওর সাথে বের হব।
--: ফোনে বললেই তো হয়। দেখা করা লাগে?
--: তুই এসব বুঝবিনা।
--: ওক্কে, বুঝা লাগবে না। বেশি দেরী করিস না। থাক রুমে গেলাম।
--: হুম যাও। ভাইয়ের কাছে মন পড়ে আছে , সেটা বললেই হয়।
--: হ্যা , তুমি তো আবার অনেক বুঝো।
রুমে এসে দেখি, আদনান নেই। একা একা ভালো লাগছে না। ও যে কেন এমন করে। তবে যাই করুক না কেন, ও সব মিলিয়ে অনেক ভালো। আমি তো ওকে যতবার দেখি , ততোবারই প্রেমে পড়ি। ওর সবদিকটাই ভালো লাগে আমার।
কেন এমন করে ও। ওর কি আগে কারো সাথে রিলেশন ছিল। হতে পারে সে মেয়েই ওকে ঠকাইছে। তাই ও কোনো মেয়েকে মানতে পারছে না।
বুক শেল্ফে বই খুঁজছিলাম।
হঠাৎ একটা ডায়েরীর উপর চোখ পড়ল।ডায়েরীটা দেখে মনে হলো, ডায়েরীতেই হয়তো লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য। ডায়েরী পড়া শুরু করলাম। কিছু কবিতা লিখা আছে শুধু ।
ভালোই লিখতে পারে ও। কিন্ত তেমন কিছুই খুজেঁ পেলাম না। হতাশ হয়ে বসে পড়লাম।
বিকালে আদনান ঘুমাচ্ছে। আমার ভালো লাগছে না। তাই বাড়ির পিছন দিকে ঘুরতে আসলাম। এসে তো আমি অবাক। একসাথে দুইটা হিজল ফুল গাছ। গাছের নিচে বিছিয়ে আছে অসংখ্য লাল লাল হিজল ফুল। মুহূর্তেই মনটা ভালো হয়ে গেল। একটা গাছ একটু বাকা টাইপের, আর নিচু। সহজেই গাছটায় উঠতে পারলাম।
দুইটা গাছের একটায় ফুল আছে , অন্যটায় নেই। ধরে নিলাম একটা ছেলে গাছ। আর অন্যটা মেয়ে গাছ। দুইটা গাছই একে অন্যের দিকে ঝুকেঁ আছে। মনে হচ্ছে দুইটা গাছই প্রেমে মত্ত।
মেয়ে গাছটাকে বললাম, দেখ তোর ভাগ্য কতো ভালো। তোকে দেখতে ঠিক নতুন বউয়ের মতো লাগছে। আর দেখ ছেলে গাছটা তোর দিকে ঝুঁকে আছে ।যেন তোকে ছাড়তেই চাচ্ছে না। নিচে অসংখ্য ফুল ছিটানো। যেন তোদের ফুলশয্যা। তোকে দেখেতো আমার হিংসে হচ্ছে খুব।
আর আমার জামাইটা কেমন। কাল রাতটা ঝগড়া করেই কাটলো।
একটুও ভালবাসেনা আমাকে।
কে বলছে ভালবাসেনা।"
শব্দটা শুনে চমকে উঠলাম।
গাছ আবার কথা বলে নাকি!! পেছনে ফিরে দেখি আদনান। ও আমার কাছে এসে বললো,
" আমার নামে অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে ?
--: আপনি না ঘুমাচ্ছেন।
--: বউ একা একা বিরহের সংলাপ বলছে। আমি ঘুমাই কি করে। তো গাছে উঠছো কেন? যদি ভূতে ধরে।
--: পেত্নীকে তো ভূতেই ধরবে।
--: পেত্নী হও, আর শাকচুন্নি হও গাছ থেকে নামো। নিচে নামার পর অনেকগুলো হিজল ফুল আমার পুরো শরীরে ছিটিয়ে দিল। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি।
--: কি করছেন আপনি?
--: বউকে সাজাচ্ছি। তোমাকেও হিজল গাছটার মতো সাজালাম। এখন তোমার জামাই ও তোমার পাশে। এখনো কি মনে কষ্ট আছে?
কেন যেন নিজেকে সামলাতে পারলাম না।
ওকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রাখলাম।
ইচ্ছে করছে অনন্তকাল এভাবেই দাড়িয়ে থাকি। সকালে ,ও নিজে আমার জন্য চা করলো,
এখন আবার ফুল ছড়িয়ে আমার মন ভালো করার চেষ্টা করছে। আমার কাছে যদি জীবনের সবচেয়ে ভালো দিনগুলো সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়, আমি এই দিনটির কথা বলবো।
আদনান কানের কাছে মুখ এনে বললো,
এই ছাড়ো। আনিলা আসছে।
প্রেম- ভালবাসা রুমে গিয়ে কইরো।
আনিলা আমাদের কাছে এসে বললো,
ও মা, জুইঁ ফুল দেখি হিজল ফুল হয়ে গেছে।
আদনান বললো,
তোর ভাবীর নাকি হিজল গাছকে দেখে হিংসে হচ্ছিল। তাই ওকে সাজিয়ে দিলাম।
" হুম , তোমাদের প্রেম দেখে হিজল গাছ লজ্জ্বায় নুয়ে পড়ছে। খেয়াল রেখ, মানুষ যেন না দেখে। বলেই আনিলা চলে গেল।
আনিলা চলে যেতেই, আদনান বললো,
" চলো, আমারাও যাই
--: আর একটু থাকি না।
--: ওকে, বউয়ের ইচ্ছা।
হিজল গাছের নিচে গিয়ে দুজনে বসলাম।
আমি ওর কাঁধে মাথা দিয়ে বসলাম।
অনুভূতিটাই অন্যরকম। নিচে ফুল, উপরে ফুল, পুরো শরীরে ফুলের ছড়াছড়ি শীতল বাতাস । এরকম অনুভূতিগুলোই হয়তো কবিরা তাদের কবিতায় উপস্থাপন করে। আদনান বললো,
--: তোমাকে নিয়ে দুই লাইন গান গাইতে ইচ্ছা হচ্ছে।
--: বলেন।
--: " জুঁই ফুল, জুঁই ফুল, সুভাস দিয়া ব্যাকুল কেন করিলি। জুঁই ফুলের ঘ্রাণে, বুইড়া লোকের মনেতেও প্রেম জাগে লো, বুইড়া লোকের মনেতেও প্রেম জাগে...
" বুইড়া লোকের মনে প্রেম জাগলেও, আপনার মনে তো আর জাগে না।" আদনান বলে উঠলো,
--: আমি তো আর বুইড়া না। বুইড়া হলে হয়তো জাগতো।
--: থাক , আর প্রেম জাগতে হবে না। চলুন বাসায় যাব। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
আনিলা কয়েকবার এসে আমার রুমে ঘুরে গেছে। মনে হচ্ছে কিছু বলবে। কিন্তু আদনান থাকায় বলতে পারছে না। তাই আদনানকে রুম থেকে বের করার জন্য বললাম,
--: আমার খুব ফুসকা খেতে ইচ্ছা করছে। প্লিজ , এনে দিন না।
--: উহু, ফুসকা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যত যাই হোক না কেন, আমি আমার একটা মাত্র বউয়ের জীবনে কোনো ক্ষতি হতে দিব না।
--: ইস!! কি আবেগ। শুনুন, গবেষনায় বলছে , একজন মেয়ের কোনো ছেলের সাথে একসাথে, একই রুমে থাকা খুবই ক্ষতিকর। সেটা জেনেও কিন্তু আমি আপনার সাথে থাকছি। তো, ফুসকা খেলে কিছু হবে না।
--: তাই নাকি। তো গবেষনাটা করলো কে? আর ছেলেদের সাথে থাকলে কি ক্ষতি হয়?
--: অনেক ক্ষতি হয়।যেমন, মেয়েরা মহিলা হয়ে যায়, ছেলেদের ছোঁয়া পেলে। তারপর আরো অনেক কিছু..।
--: বলো, আর কি?
--: দূর,প্যাঁচাবেন না। আপনি ফুসকা এনে দিন।
--: নতুন বিয়ে হইছে । একটু সেঁজে- গুজে বের হতে হবে না ,বলো।
--: আহা! জামাই- বউ , একে অপরের স্বত্বা। তাই, আমি সাঁজলেই আপনার সাঁজা হয়ে যাবে। রাত হয়ে যাচ্ছে। যান তো।
আদনান চলে গেল ফুসকা আনতে। এর মধ্য আনিলা আবার আসছে।
--: কী গো ননদিনী, কিছু বলবি মনে হয়।
--: জ্বী, ভাবি-সাহেবা।
--: দেখলি, আমার আধ্যাতিক ক্ষমতা অনেক বেশি। তোকে দেখেই বুঝলাম কিছু বলবি, কিন্তু তোর ভাইয়া থাকায় বলতে পারছিস না। তাই আদনানকে ফুসকা আনতে পাঠালাম।
--: হুম, আপনার আধ্যাতিক ক্ষমতা অনেক বেশি। এখন শোন, মারুফ দেশের বাহিরে যাবে। ও চাচ্ছে পরের শুক্রবার বিয়েটা করে ফেলতে। কারণ বাহিরে গেলে, এক বছর পর আসবে। সবাইকে বলে ম্যানেজ করে দে না।
--: আচ্ছা বলবো, কিন্তু ট্রিট দিতে হবে আগে।
--: সব দিব, তুই শুধু একটু ম্যানেজ কর।
--: ওকে ডিয়ার।
আনিলা আমার কপালে চুমু দিয়ে বললো, তুমি আমার ভালো ভাবি। রুমে গেলাম, মারুফ কল দিবে। আদনান ফুসকা এনে আনিলা আর আনিসা আপুকে দিল। আর বাকি গুলো রুমে নিয়ে একা একা খাচ্ছে। আমি যখন খেতে চাইলাম, বললো..
" আহা! তোমাকে কষ্ট করে খেতে হবে না।
আমি খেলেই তো ,তোমার খাওয়া হয়ে যাবে। জানোই তো, স্বামী- স্ত্রী এক স্বত্বা।"
কেমনটা লাগে। এই লোক এমন কেন? আমার কথা আমাকেই শোনাচ্ছে।আমি এতোটাই পছন্দ করি ফুসকা,সারাদিন কিছু না খেয়ে শুধু ফুসকা খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারি। আর এই লোক আমাকে না দিয়ে, একা একা খাচ্ছে আর বলতেছে,
" আহ! কি ঝাল। সত্যিই ফুসকা অনেক মজার খাবার।"
আমি ভাবছি, শেষে হয়তো কয়েকটা রাখবে। কিন্তু সবগুলোই খেয়ে ফেললো। এমন ছ্যাঁচড়া কেন এই লোক। আমি যে রুমে আছি, তার সেদিকে কোনো খেঁয়ালই নেই। জেদ করে, আমি আনিসা আপুর রুমে চলে গেলাম।
আনিসা আপুর মেয়ে আরিহা আমাকে বললো,
" মামী ,মামা তোমাকে অনেক ভালবাসে। দেখো, তোমার জন্য কতোগুলা ফুসকা এনে আমাদের রুমে রেখে গেল।"
আমি বললাম, না ওগুলো তোমার জন্য এনেছে।
তখন আনিসা আপু বললো,
" না, আমরা খেয়েছি। এগুলো তোমার জন্য এনে রেখে গেছে। আদনান বলছে, রুমে গিয়ে আগে তোমাকে লোভ দেখাবে। তারপর এগুলো নিয়ে তোমাকে দিবে।
জানো, আমার ভাইটা খুব ভালো। ওকে বুঝে মানিয়ে নিতে পারলে, তুমি অনেক সুখী হবা।"
আমি মনে মনে বললাম, " হ্যা,সত্যিই অনেক ভালো ও।
শাশুড়ি মা আসলো ,আনিসা আপুর রুমে।
আমি শাশুড়ি মাকে বললাম,
" মা, আমাদের ভোলার নিয়ম তো, বিয়ের দুই দিন পর মেয়েকে তার বাড়ির লোক এসে নিয়ে যাবে। কাল তো আমাদের বাসা থেকে লোকজন আসবে।"
শাশুড়ি মা বললো,
" না, কাল তোমাকে যেতে দেওয়া হবে না। ভোলা থেকে খুলনা জার্নি করা অনেক কষ্টের। কাল আসছো। সেই ধকল ই এখনো কাটাতে পারোনি। আবার জার্নি! কাল এসে কাউকে দেখে যেতে বলো। এক মাস পর যাবা। তোমার মাকে আমি বলে দিব।"
"আচ্ছা মা।" বলে আমি রুমে চলে আসলাম।
খুব খারাপ লাগছে। বিয়ে হলেই দূরত্ব চলে আসে। আজ যে কয়বার আম্মুর সাথে কথা বলছি, ততবারই আম্মু কান্না করছে। ছোট বোনটার জন্য ও খারাপ লাগছে। আবার কতোদিন পর দেখব। ভাবতেই কান্না আসছে। আদনান এসে কাছে দাড়াতেই ওকে ধরে কান্না করে দিলাম। ও বলতেছে, আহা ! কাঁদছো কেন? ফুসকা দেইনি বলে। আচ্ছা এনে দিচ্ছি।
আমি চোখ মুছে বললাম, "ফুসকার জন্য কেউ কাঁদে? মা বললো , এক মাস পর বাড়ি যেতে । খুব খারাপ লাগছে।"
" হ্যা, মা আমাকেও বলছে।কান্না থামাও। আর কিছুদিন যাক, তারপর নিয়ে যাব।
আজ আমাদের বাসা থেকে, মামা- মামী আর আব্বু আসছে আমাকে দেখতে। খুব ভালো লাগছে। শাশুড়ি মা মামীকে বললো,
" বউমা , আমার খুব ভালো। খুব সকালে উঠে নামাজ আদায় করে। কাজেও সাহায্য করে। দুইদিনেই মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে।"
মামী বললো,
" ও তো আপনাদের খুব প্রসংসা করছে। আপনাদের কাছে আসছে, আপনারাই এখন ওর সবকিছু। ভুল কিছু করলে, মেয়ে ভেবে ক্ষমা করে দিবেন।"
শাশুড়ি মা বললো,
" ভুল মানুষ করতেই পারে। আমি ওকে আমার মেয়ের মতো করেই আগলে রাখবো।
চিন্তা করবেন না।"
আমাদের বাসার লোক, একদিন থেকে চলে গেল। যাওয়ার সময় আব্বু আমাকে ধরে অনেকক্ষণ কাঁদলো। মেয়েদের জীবন আসলেই অনেক কষ্টের। কতো কিছু ত্যাগ করতে হয়।
আদনান দুপুরে একটা নীল রঙের শাড়ি নিয়ে আসলো। শাড়িটা দেখেই মন ভালো হয়ে গেল। আমি আদনানকে বললাম,
--: আপনি কীভাবে বুঝলেন, নীল রঙ আমি পছন্দ করি।
--: তোমার মনে লুকিয়ে আছে, অনেক বিরহ-কষ্ট। আর নীল হচ্ছে বিরহের প্রতীক।
তাই নিয়ে আসলাম।
--: জানেন,আমার নীল রঙ এতোটাই পছন্দের, সব সময় নীল রঙের ড্রেস পড়তাম। একবার ফ্রেন্ডরা সবাই মিলে ভাবলাম, এক রকম ড্রেস কিনব। আনিলা বলছিল, ড্রেস যে কোনো রঙের হোক তাতে সমস্যা নেই। শুধু নীল না হলেই হলো। পরে ড্রেস মিল করতে না পেরে, শেষে নীল রঙের ড্রেসই কিনতে হয়েছে। আমি সেদিন খুব খুশিঁ হয়ে ছিলাম।
--: বিকালে আমরা বের হব। শাড়ি পড়ে তৈরি থেকো। আদনান আমাকে নিয়ে ওদের বাসার কাছের রুপসা নদীতে নিয়ে গেল। খুব ভালো লাগছে। প্রচুর বাতাস। পাশে প্রিয় মানুষ। নদীর কিনারে কাশঁফুল। ও আমাকে ভালবাসে কিনা জানিনা। তবে আমার মন ভালো করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে ও। ছোট ছোট ইচ্ছাগুলোকে গুরুত্ব দেয়। আব্বু যাওয়ার সময় যখন আমাকে ধরে কাঁদছিল, তখন ও আব্বুকে বলছিল,
" কাঁদবেন না। ও সুখে থাকবে এখানে।"
জানিনা কতোটা সুখে থাকবো। তবে ও যে ভরসা দিয়েছে এটাই অনেক।
ওর হাত ধরে উঠছি। কেমন যেন এক অনুভূতি হচ্ছে। বুকের ভেতরটা এক অজানা ভালো লাগায় কেঁপে উঠছে। আমি মনে মনে একটা কবিতা রচনা করে ওকে বললাম,
"পড়ন্ত বিকালে, নদীরও কিনারে -
হাতে রেখে হাত, হাটতেছি একসাথে,
সৃতি হয়ে থাকবে, হৃদয় পটে-
হারিয়ে যাবে যখন , কালের প্রবাহে।"
"বা!! সুন্দর তো। আর যদি না হারাই তাহলে।" বলে উঠলো আদনান।
আমি বললাম, সুন্দর মুহূর্ত সবসময়ই মনে থাকবে। হারাও বা না হারাও।
যাই হোক আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল।
--: বলো।
--: মারুফ ভাইয়ের সাথে , আনিলার বিয়েটা তাড়াতাড়ি দিলে ভালো হতো। মারুফ ভাইকে তার কোম্পানি থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য দেশের বাহিরে পাঠানো হবে, এক বছরের জন্য।
সামনের মাসেই চলে যাবে। মাকে বলে পরের শুক্রবার বিয়ের ব্যাবস্থা করলে ভালো হতো।
--: আচ্ছা, দেখি।
--: উহু, কোনো দেখাদেখি নেই। কনফার্ম করতে হবে।
--: আচ্ছা , বাসায় যেয়ে নেই।
বাসায় ফিরে দেখি, আদনানের চাচা-চাচী, আর ওর চাচার ছেলে আবির আসছে। ওরা বিয়েতে যেতে পারেনি। দেশের বাহিরে ছিল। আমাকে দেখে চাচী বলতেছে,
--: তোমার তো ভাগ্য ভালো। আদনানকে পেয়েছ। তোমার চেয়ে সুন্দরী কতো মেয়ে ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু ও করলো না। শেষ পর্যন্ত তোমাকে করলো। আমার বোনের মেয়ে তোমার চেয়ে অনেক সুন্দরী, আর ধনী। ওকে না করে তোমাকে করলো। কি জানে, তোমার মাঝে কি খুজেঁ পেয়েছে।
আদনানের রাগ রাগ ভাব নিয়ে বললো,
" চাচী, এসব তোমার না জানলেও হবে। সুন্দরী বউ হলেই যদি সব মানুষ সুখী হতো, তাহলে সবচেয়ে বেশি সুখী, চাচার হওয়ার কথা ছিল। অথচ , সেই সবচেয়ে অসুখী মানুষ। আর জুঁই যথেষ্ট সুন্দরী। আর ওর মনটা অনেক ভালো।
ও আমার পরিবারকে দুইদিনেই আপন করে নিয়েছে। যেটা আপনার বোনের মেয়ে পারতো না।"
চাচী বলে উঠলো,
" তুই আমার সাথে এভাবে কথা বললি? আমিও দেখে নিব কতোটা ভালো এই মেয়ে।
আমি ভাবতেছি,
"এক সমস্যার মধ্য আরেক সমস্যা উপস্থিত। আমি কি পারবো, সব বাধা অতিক্রম করে সফল হতে?
চলবে……
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।